যুক্তরাষ্ট্রে দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় না কেন? জানুন কারণ ও ইতিহাস। যুক্তরাষ্ট্রে কেউ কেন দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না? জানুন ইতিহাস, ২২তম সংশোধনী, রুজভেল্টের ঘটনা এবং গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের আসল ব্যাখ্যা।
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম ও প্রথা রয়েছে যা গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করেছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।
এই নিয়মটি একদিকে যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধ করে, অন্যদিকে তা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই নিয়ম কেন করা হলো? তার পেছনের ইতিহাস ও যুক্তিগুলোই আমরা এই ব্লগে বিশ্লেষণ করবো।
যুক্তরাষ্ট্রে কেন দুই বারের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না?
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা: একটি পরিচিতি
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেনশিয়াল শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান, যেখানে রাষ্ট্রপতি (President) একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
এই ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বা উপ-প্রধানমন্ত্রী নামক কোনো পদ নেই।
২২তম সংশোধনী: প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সীমাবদ্ধতার সূচনা
১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়—
এটি হলো ২২তম সংবিধান সংশোধনী (22nd Amendment), যেখানে বলা হয়:
“No person shall be elected to the office of the President more than twice…”
অর্থাৎ, কেউ যদি দুইবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, তবে তিনি তৃতীয়বারের জন্য আর নির্বাচন করতে পারবেন না।
ইতিহাসের পেছনে ফিরে দেখা: রুজভেল্টের চার মেয়াদ
এই নিয়ম চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন একজন ব্যক্তি—ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট (Franklin D. Roosevelt)।
- তিনি ১৯৩৩ সাল থেকে টানা চারবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন (১৯৪5 সালে মৃত্যুবরণ করেন)।
- সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মহামন্দার মতো বড় সংকট চলছিল, তাই জনগণ তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিল।
- কিন্তু তাঁর দীর্ঘমেয়াদি শাসন অনেকের মধ্যে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা তৈরি করে।
যুদ্ধ শেষে কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়— ভবিষ্যতে যেন কেউ এত দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে না পারেন।
এ কারণে ১৯৪৭ সালে কংগ্রেসে ২২তম সংশোধনী পাস হয় এবং ১৯৫১ সালে তা আইনে পরিণত হয়।
যুক্তিগুলো কী ছিল?
ক্ষমতার নিয়মিত রদবদল
গণতন্ত্রে একে অপরকে পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত নতুন নেতৃত্ব আনা হলে:
- নতুন চিন্তা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসে
- নীতিনির্ধারণে বৈচিত্র্য আসে
- একক কোনো ব্যক্তির আধিপত্য কমে যায়
২. স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধ
কোনো ব্যক্তি যদি দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকেন, তবে:
- তিনি বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন
- এতে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে
৩. প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তোলা
যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু ব্যক্তি নয়, বরং প্রতিষ্ঠান।
দুই মেয়াদের সীমা রাষ্ট্রপতিকে মনে করিয়ে দেয়— তিনি সেবা দিতে এসেছেন, শাসন করতে নয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমন নিয়ম আছে কি?
- চীন, রাশিয়া ও তুরস্কে প্রেসিডেন্টরা বহুবার ক্ষমতায় আসছেন এবং কিছু দেশে নিয়ম পাল্টে দীর্ঘসময় ধরে শাসন করছেন।
- কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যাতে কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করতে না পারে।
কেউ যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হন?
এই প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। ২২তম সংশোধনী অনুযায়ী:
- যদি কেউ দুই বছরের বেশি সময় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন, তখন সেটা এক ‘মেয়াদ’ হিসেবে ধরা হবে।
- ফলে সে ব্যক্তি আর দুইবার নয়, একবারই নির্বাচন করতে পারবেন।
উদাহরণ: যদি কোনো ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্টের মৃত্যু বা অপসারণের ফলে দায়িত্ব পান এবং দুই বছরের বেশি মেয়াদ পূর্ণ করেন, তবে তিনি আর মাত্র একবার নির্বাচন করতে পারবেন।
ব্যতিক্রম আছে কি?
কোনো ব্যতিক্রম নেই।
এমনকি কেউ চাইলেও আইন অনুযায়ী তৃতীয়বার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
তবে তাত্ত্বিকভাবে কংগ্রেস ও রাজ্যগুলো সম্মত হলে ২২তম সংশোধনী বাতিল করা সম্ভব, কিন্তু তা অত্যন্ত জটিল এবং আজ পর্যন্ত কখনো হয়নি।
এ দেশ ধ্বংস করার জন্যই তারা রাজনীতি করে আসছে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বিষয় | তথ্য |
---|---|
সর্বোচ্চ মেয়াদ | দুইবার (৮ বছর) |
সংশোধনী | ২২তম (1951 সালে প্রণয়ন) |
ব্যতিক্রম | নেই |
প্রথম চারবারের প্রেসিডেন্ট | ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট |
ব্যতিক্রম ঘটলে | সাংবিধানিক লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে |
যুক্তরাষ্ট্রে একজন ব্যক্তি কেন দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না—এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস, অভিজ্ঞতা ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়াস।
এই নিয়মের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছে, নেতৃত্ব মানে ব্যক্তি নয়, বরং দায়িত্ব এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে সেবাদান।
তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে টেকসই ও স্বচ্ছ রাখার জন্য এই নিয়ম যুক্তরাষ্ট্রের একটি গৌরবজনক দৃষ্টান্ত।