নির্বাচন ইশতেহার: জনগণের স্বপ্ন নিয়ে রাজনৈতিক দলের রঙ্গ তামাশা। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম ও অঙ্গীকার নিয়ে জনগণের আগ্রহ বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচন ইশতেহার প্রকাশ করেছে, যেখানে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।
ইশতেহার কী?
নির্বাচন ইশতেহার হলো একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির দলিল, যেখানে দলটি ক্ষমতায় এলে কী কী পদক্ষেপ নেবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। এটি একদিকে যেমন জনসাধারণের প্রত্যাশা পূরণের একটি প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের নীতিগত দিকনির্দেশনাও। নির্বাচন ইশতেহার নিয়ে নাটক
বিগত নির্বাচনে প্রধান দলগুলোর ইশতেহারে যা যা ছিলো:
১. আওয়ামী লীগ: উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছিলো
আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে “উন্নয়নের ধারাবাহিকতা” বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য দিকগুলো:
-
স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়ন
-
১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল
-
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ডিজিটাল রূপান্তর
-
কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি
-
দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমনে “জিরো টলারেন্স” নীতি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি): জনগণের সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো
বিএনপির ইশতেহারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে:
-
বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ
-
ছাত্র ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্প
-
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে স্বচ্ছতা আনা
-
মানবাধিকার সংরক্ষণ ও বাক-স্বাধীনতা রক্ষা
-
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
অন্যান্য দল ও জোটগুলোর ইশতেহার:
জাতীয় পার্টি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী দলসহ অনেকেই নির্বাচন ইশতেহার প্রকাশ করেছে, যেখানে মূলত:
-
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা
-
পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা
-
শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতকরণ
-
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অধিকার সংরক্ষণ
জনগণের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন ইশতেহার প্রকাশের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, আগের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে; অন্যদিকে কেউ কেউ নতুন পরিকল্পনায় আশাবাদী। নির্বাচন ইশতেহার এর নামে ভন্ডামি, নির্বাচন ইশতেহার এর মানে মশকরা
একজন তরুণ ভোটার বলেন,
“আমরা চাই প্রতিশ্রুতি শুধু কাগজে না থেকে বাস্তবায়নে আসুক। উন্নয়নের কথা শুনতে চাই না, দেখতে চাই।” বিশেষজ্ঞদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়টি নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর। শুধুমাত্র উন্নয়ন নয়, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলাই হবে দেশের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। নির্বাচন ইশতেহার শুধুমাত্র একটি প্রতিশ্রুতি নয়; এটি জনগণের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার প্রতিফলন। দলগুলো যদি তাদের ইশতেহারের প্রতিটি পৃষ্ঠাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে পারে, তবে একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন সম্ভব।
জনগণের সেবা করা, অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসা, দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া, রাষ্ট্র উন্নয়ন ও সংস্কার সহ অসংখ্য বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর ভুলে জান প্রতিশ্রুতির কথা। এভাবেই স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো শাসন ও নিপীড়ন করে আসছে এদেশের সর্ব সাধারণ মানুষগুলোকে। ইশতেহারের নামে রঙ্গ তামাশা আর চলতে দেওয়া হবে না।
ইশতেহারের নামে রঙ্গ তামাশা বন্ধে যা করনীয়
নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে তদন্তকারি একটি দল থাকা জরুরি, এই তদন্তকারি দল নির্বাচন পরবর্তি সময়ে, রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া ইশতেহার এর বিষয়ে খোঁজ খবর নিবে এবং ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজনৈতিক দল কতটুকু কাজ বাস্তবায়ন করছে তা নজরদারি করা। তদন্তকারি দলের কাছে জবাবদিহি করা, নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কতটুকু বাস্তবায়ণ করতে পেরেছেন এবং ইশতেহার অনুযায়ী বাঁকী কাজ গুলো কবে বা কতদিনের মধ্যে বাস্তবায়ণ করতে সক্ম হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের উপর বল প্রয়োগ করে ইশতেহার অনুযায়ী প্রতিটি কাজ বাস্তবায়ণ করে নেওয়া এরকম একটি নির্বাচন কমিশন হলে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নাগরিক সকলেই উপকৃত হবেন।
শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ ও নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা
একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণ হচ্ছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আর এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালনার দায়িত্বে থাকে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। যদি কমিশন রাজনৈতিক চাপমুক্ত, আইনপ্রয়োগে সক্রিয় ও জবাবদিহিমূলক হয়, তবে তা শুধু একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করেই না, বরং দেশবাসীর জন্য আরও নানা সুবিধা ও অধিকারের বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ হবে আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্র
১. ভোটারদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত হয়
শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে। এতে কেউ সহজে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় না। ভোটার তালিকা হালনাগাদ থাকে, ভূয়া ভোটার কমে যায় এবং নাগরিকরা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে। এতে জনগণের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা বাড়ে।
২. নিরাপদ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন
একটি কার্যকর কমিশন নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সহিংসতা রোধ করতে পারে। এতে ভোটার, প্রার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলেই নিরাপদ থাকে। ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকে, যাতে সবাই নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে।
৩. সমান সুযোগ ও প্রতিযোগিতার নিশ্চয়তা
শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে। কোনো প্রভাবশালী দল বা প্রার্থী যাতে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র বা সম্পদ ব্যবহার করতে না পারে তা নিশ্চিত করা হয়। সব দল মিডিয়া কাভারেজ, সভা-সমাবেশ ও প্রচারণার সমান অধিকার পায়।
৪. নিরপেক্ষ ফলাফল ও জনআস্থার ভিত্তি
যখন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করে, তখন ভোটের ফলাফল জনগণ বিশ্বাস করে। এতে সমাজে বিভক্তি কমে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে। বিরোধী দল ফলাফল মেনে নেয় এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
৫. মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা পায়
শক্তিশালী কমিশন নির্বাচন-পূর্ব সময়ে ভোটারদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ, সমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিত করে। মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি ও পর্যবেক্ষকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়। এতে নির্বাচন হয় স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।
৬. দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস পায়
যখন কমিশন দুর্নীতিমুক্ত ও পেশাদার হয়, তখন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমে। আর্থিক লেনদেন, ভোট কেনা বা জালিয়াতির আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পায়। এতে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচন করার সাহস পান এবং জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।
৭. নারী ও সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ বাড়ে
শক্তিশালী কমিশন বিশেষভাবে নারীদের, সংখ্যালঘুদের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে উৎসাহ দেয়। নিরাপদ পরিবেশ ও সচেতনতা বাড়িয়ে তাদের ভোটদান ও প্রার্থী হওয়া নিশ্চিত করে। ফলে গণতন্ত্র আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়।
৮. ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গঠনে সহায়ক
সুস্থ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সমাজের শিক্ষিত, দক্ষ ও তরুণ নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে। শক্তিশালী কমিশনের অধীনে পরিচালিত নির্বাচন ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে সহায়ক হয়।