টাইফয়েড জ্বর একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা Salmonella Typhi ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। জেনে নিন টাইফয়েডের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি এবং কিভাবে সহজ উপায়ে এ রোগ থেকে বাঁচা যায়।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনও টাইফয়েড জ্বর একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে অপরিষ্কার পানি ও খাবার গ্রহণের ফলে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে রোগী মারাত্মক জটিলতায় পড়তে পারে।
টাইফয়েড জ্বর কি?
টাইফয়েড জ্বর একটি সংক্রামক রোগ, যা মূলত Salmonella Typhi নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। এটি একটি মারাত্মক অন্ত্রজনিত জ্বর, যেটি সাধারণত দূষিত পানি, অপরিষ্কার খাবার বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়।
-
টাইফয়েড জ্বর
-
টাইফয়েড জ্বর কি
-
টাইফয়েডের লক্ষণ
-
টাইফয়েডের প্রতিরোধ
-
টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা
-
টাইফয়েডের কারণ
-
টাইফয়েড জ্বরের উপসর্গ
-
টাইফয়েড টিকা
-
টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায়
-
টাইফয়েড চিকিৎসা
রোগের কারণ
চিকিৎসকদের মতে, টাইফয়েড জ্বরের মূল কারণ হলো Salmonella Typhi নামের ব্যাকটেরিয়া। দূষিত খাবার, বিশুদ্ধ পানি না খাওয়া এবং অপরিষ্কার শৌচাগার ব্যবহারের মাধ্যমে এ জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে।
টাইফয়েড জ্ব’র প্রতিরোধে সরকারি টিকা কর্মসূচি: এখনই নিবন্ধন করুন
বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। দূষিত পানি, অপরিষ্কার খাবার এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। রোগের জটিলতা কমাতে এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে।
ডায়াবেটিস কি, লক্ষণ ও প্রতিকার – ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয় জেনে নিন
টিকা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য
সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এই কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হলো—
-
টাইফয়েড জ্বরের প্রাদুর্ভাব কমানো
-
জনগণকে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা দেওয়া
-
হাসপাতালে ভর্তির চাপ ও চিকিৎসা খরচ হ্রাস করা
কারা টিকা নিতে পারবেন?
-
৯ মাস বয়স থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোররা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকা পাবে।
-
বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
-
যাদের আগে টাইফয়েড টিকা নেওয়া হয়নি তারা অবশ্যই নিবন্ধন করে নিতে পারবেন।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
-
নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করে নিবন্ধন করা যাবে।
-
অনলাইনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধন করতে এখানে ক্লিক করুন
-
নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, টিকা নেওয়া হলে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। তাই শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুরক্ষাই নয়, বরং সমগ্র সমাজকে নিরাপদ রাখতে সবাইকে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা গ্রহণ। তাই সরকার ঘোষিত এই টিকাদান কর্মসূচিতে সবাইকে দ্রুত নিবন্ধন করতে হবে। সচেতনতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমেই দেশকে টাইফয়েডমুক্ত করা সম্ভব।
এখনই নিবন্ধন করুন, নিজে সুরক্ষিত থাকুন, অন্যকেও সুরক্ষিত রাখুন।
টাইফয়েড জ্বরের প্রধান বৈশিষ্ট্য
-
দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ জ্বর
-
শরীরে দুর্বলতা ও অবসাদ
-
পেট ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
-
মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা ও শরীরে ব্যথা
কিভাবে ছড়ায়
-
অপরিষ্কার খাবার বা পানি পান করলে
-
অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহারের কারণে
-
সংক্রমিত ব্যক্তির হাতের মাধ্যমে
-
স্বাস্থ্যবিধি না মানার ফলে
টাইফয়েড জ্বরের ঝুঁকি
চিকিৎসা না করলে এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন অন্ত্র, লিভার বা প্লীহায় ক্ষতি করতে পারে। মারাত্মক ক্ষেত্রে অন্ত্রে ছিদ্রও হতে পারে।
সংক্ষেপে, টাইফয়েড জ্বর হলো একটি জীবাণুবাহিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা সময়মতো চিকিৎসা করলে পুরোপুরি সেরে ওঠা সম্ভব।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ
টাইফয়েড সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং সময়ের সাথে লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়। এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো—
-
উচ্চ জ্বর (ধীরে ধীরে বাড়ে, কখনও ১০৩°–১০৪°F পর্যন্ত উঠতে পারে)
-
শরীর দুর্বলতা ও অবসাদ
-
মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা
-
ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া
-
পেট ব্যথা, ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য
-
লালচে র্যাশ (rose spots) – বুক ও পেটে ছোট দাগ দেখা দিতে পারে
-
কাঁপুনি ও ঘাম
টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায়
-
সবসময় সিদ্ধ বা বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
-
অপরিষ্কার খাবার, কাঁচা ফল বা রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
-
খাবার খাওয়ার আগে ও শৌচাগার ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া অভ্যাস করতে হবে।
-
টিকা (Typhoid Vaccine) নেওয়া খুবই কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
-
সংক্রমিত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে এবং তার ব্যবহৃত জিনিস পরিষ্কার করতে হবে।
টাইফয়েডের চিকিৎসা
-
অ্যান্টিবায়োটিক: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়।
-
পর্যাপ্ত বিশ্রাম: রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে।
-
পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার: ডিহাইড্রেশন ঠেকাতে স্যালাইন, স্যুপ, জুস ইত্যাদি খেতে হবে।
-
সহজপাচ্য খাবার: ভাত, খিচুড়ি, স্যুপ, সেদ্ধ সবজি দেওয়া যেতে পারে।
-
গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ইন্ট্রাভেনাস (IV) স্যালাইন ও ওষুধ নিতে হয়।
⚠️ সতর্কতা:
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না, এতে ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি নষ্ট না হয়ে আবার শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে পারে।
টাইফয়েড জ্বর একটি মারাত্মক হলেও প্রতিরোধযোগ্য রোগ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বিশুদ্ধ খাবার-পানি এবং টিকা গ্রহণ করলে এটি সহজেই এড়ানো সম্ভব।