পলিপাস – এক নীরব বিপদের নাম, পলিপাস হলে কিভাবে বুঝবেন , পলিপাস হলে করণীয়, পলিপাস এর ক্ষেতে ছোট কিংবা বড় বলে কিছু নেই
এটি যে কারই হতে পারে।
পলিপাস কী?
পলিপা’স (Polyp) হলো শরীরের অভ্যন্তরে মিউকাস মেমব্রেন বা ঝিল্লি আবৃত অংশে গঠিত একটি অতিরিক্ত কোষের গুচ্ছ বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত টিস্যু। এটি সাধারণত নাক, কোলন, গলব্লাডার, জরায়ু, পাকস্থলি, কিংবা মূত্রাশয়-এ দেখা যায়।
পলিপ সাধারণত বিনাইন (non-cancerous) হলেও কিছু পলিপ সময়ের সাথে ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই একে অবহেলা করলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে।
পলিপাস কেন হয়?
পলিপ গঠনের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে, যেমন:
-
দীর্ঘদিনের প্রদাহ বা সংক্রমণ
-
অ্যালার্জি রিঅ্যাকশন
-
জেনেটিক বা বংশগত কারণ
-
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (বিশেষ করে জরায়ু বা এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপে)
-
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন
-
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD)
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
পলিপাস হলে লক্ষণগুলো কী?
পলিপাসের লক্ষণ নির্ভর করে এটি শরীরের কোন স্থানে হয়েছে তার উপর। নিচে বিভিন্ন ধরণের পলিপাসের লক্ষণ দেওয়া হলো:
নাকের পলিপ (Nasal Polyps):
-
নাক বন্ধ থাকা
-
ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পাওয়া
-
নাক দিয়ে পানি পড়া
-
মাথাব্যথা ও মুখে চাপ অনুভব
কোলনের পলিপ (Colon Polyps):
-
পায়খানায় রক্ত যাওয়া
-
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
-
পেট ব্যথা
-
অতিরিক্ত গ্যাস
জরায়ুর পলিপ (Uterine Polyps):
-
অনিয়মিত ঋতুচক্র
-
অতিরিক্ত রক্তপাত
-
সন্তান ধারণে সমস্যা
পলিপাস হলে কী ধরনের জটিলতা বা অসুবিধা হতে পারে?
-
দীর্ঘমেয়াদী অজানা রক্তপাতের কারণে রক্তাল্পতা
-
ইনফেকশন বা প্রদাহ
-
বন্ধ্যাত্ব (uterine polyps ক্ষেত্রে)
-
কোলন বা গ্যাস্ট্রিক পলিপে ক্যান্সারে রূপান্তরের আশঙ্কা
-
শ্বাসকষ্ট (নাকের পলিপে)
-
দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা ও মানসিক অস্বস্তি
পলিপাস হলে করণীয় কী?
১. সঠিক ডায়াগনোসিস:
-
ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ (নাকের পলিপে)
-
কোলোনোস্কোপি, এন্ডোস্কোপি, আলট্রাসনো, সিটি স্ক্যান বা বায়োপসি করতে হতে পারে
২. চিকিৎসা পদ্ধতি:
-
ঔষধে নিয়ন্ত্রণ:
-
স্টেরয়েড স্প্রে বা অ্যান্টিবায়োটিক (নাকের পলিপে)
-
হরমোন নিয়ন্ত্রিত ওষুধ (জরায়ুর পলিপে)
-
-
সার্জারি:
-
পলিপ বড় হলে বা বারবার হলে সার্জারি করে তুলে ফেলা হয় (পলিপেক্টমি)
-
নাকের ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপিক সার্জারি, কোলনের ক্ষেত্রে কোলোনোস্কোপিক পলিপেক্টমি
-
৩. জীবনযাপনে পরিবর্তন:
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ (ফাইবারযুক্ত খাবার, কম চর্বি)
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ
-
এলার্জির ট্রিগার থেকে দূরে থাকা
-
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
পলিপা’স একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা অনেক সময় নিরবেই বাড়তে থাকে এবং জটিলতায় পরিণত হয়। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতা পলিপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এবং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই দেরি না করে সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
দাঁতের গোড়ায় জমে থাকা পাথর দূর করুন
শিশুদের ক্ষেত্রে পলিপাস কোথায় ও কীভাবে হতে পারে?
১. নাকের পলিপ (Nasal Polyps):
-
শিশুদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেলেও অ্যালার্জি, অ্যাজমা, বা সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাঝে নাকের পলিপ বেশি দেখা যায়।
-
লক্ষণ: নাক বন্ধ, ঘ্রাণশক্তি হ্রাস, ঘন সর্দি, মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া।
২. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল পলিপ / কোলনের পলিপ (Juvenile Polyps):
-
৫–১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে Juvenile Polyps সবচেয়ে সাধারণ।
-
সাধারণত কোলনে (Colon) দেখা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই non-cancerous হয়।
-
লক্ষণ: পায়খানায় রক্ত যাওয়া, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য।
কখন শিশুদের ডাক্তারের কাছে নিতে হবে?
-
পায়খানায় বারবার রক্ত দেখা গেলে
-
নাক বন্ধ থেকে গেলে ও ঘন ঘন সর্দি হলে
-
বাচ্চা ঠিকমতো ঘুমাতে না পারলে
-
পেট ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘস্থায়ী হলে
-
Juvenile polyps সাধারণত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়।
-
নাকের পলিপে অ্যান্টিহিস্টামিন, নাকের স্প্রে বা প্রয়োজনে ছোট সার্জারি করা হয়।
হ্যাঁ, ছোট বাচ্চাদেরও পলিপাস হতে পারে, তবে সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসা নিলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং অনেকক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব। শিশুদের অস্বাভাবিক কোনো উপসর্গ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পলিপা’স এর চিকিৎসা খরচ কেমন হয়?
পলিপাসের চিকিৎসা খরচ রোগের ধরন, অবস্থান, জটিলতা এবং ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। নিচে বাংলাদেশে (বা দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে) সাধারণ খরচের একটা ধারণা দেওয়া হলো:
পলিপাসের চিকিৎসা খরচের বিস্তারিত:
১. ডাক্তার দেখানো ও প্রাথমিক পরীক্ষা:
ধাপ | খরচ (আনুমানিক) |
---|---|
সাধারণ চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ | ৳৫০০ – ১৫০০ |
প্রাথমিক স্ক্যান / এক্স-রে / নাক চেক | ৳৫০০ – ২০০০ |
রক্ত পরীক্ষা, ইওসিনোফিল কাউন্ট ইত্যাদি | ৳৪০০ – ১০০০ |
২. ডায়াগনোস্টিক টেস্ট / স্ক্যান:
টেস্ট | আনুমানিক খরচ |
---|---|
এন্ডোস্কোপি / নাকের এন্ডোস্কপি | ৳২০০০ – ৫০০০ |
কোলোনোস্কোপি (কোলনের পলিপে) | ৳৫০০০ – ১০০০০ |
সিটি স্ক্যান / এমআরআই (প্রয়োজনে) | ৳৭০০০ – ১৫০০০ |
৩. চিকিৎসা:
ধরন | আনুমানিক খরচ |
---|---|
স্টেরয়েড স্প্রে / অ্যান্টিহিস্টামিন | ৳৫০০ – ২০০০/মাস |
অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স | ৳৩০০ – ১০০০ |
হরমোন নিয়ন্ত্রক ওষুধ (জরায়ুর পলিপে) | ৳১০০০ – ৩০০০+ |
৪. সার্জারি (Polypectomy):
ধরণ | আনুমানিক খরচ |
---|---|
নাকের পলিপ সার্জারি (FESS / Endoscopic) | ৳৩০,০০০ – ৬০,০০০ |
কোলোনের পলিপ সার্জারি | ৳৫০,০০০ – ১,০০,০০০ (সরকারি হাসপাতালে কমে হতে পারে) |
জরায়ুর পলিপ অপসারণ (Hysteroscopic polypectomy) | ৳৪০,০০০ – ৮০,০০০ |
ডায়াবেটিস কি, লক্ষণ ও প্রতিকার – ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয় জেনে নিন
৫. সরকারি vs বেসরকারি:
-
সরকারি হাসপাতালে খরচ অনেক কম (সাধারণত টেস্ট ও ওষুধ মূল্যে সাবসিডি থাকে)।
-
বেসরকারি হাসপাতালে মানভেদে খরচ বেশি হয়, তবে পরিষেবা ও সময় সাশ্রয় হয়।
সাধারণ পলিপের চিকিৎসায় খরচ:
-
ঔষধে নিয়ন্ত্রণযোগ্য পলিপ: ৳২০০০ – ১০,০০০
-
সার্জারির প্রয়োজন হলে: ৳৩০,০০০ – ১,০০,০০০+
সময়মতো চিকিৎসা নিলে জটিলতা ও খরচ দুটোই কমানো সম্ভব।
নিজে কোনো ওষুধ শুরু করবেন না। রোগের ধরন ও মাত্রা বুঝে চিকিৎসক যা বলবেন সেটাই অনুসরণ করুন।
আপনার সুস্থতা আমাদের কামনা।